নাজারেথের যিশু (৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ – ৩০ খ্রিস্টাব্দ) বা যিশু খ্রিস্ট (সংক্ষেপে যিশু; ইসলামি মতে ঈসা) (হিব্রু: יֵשׁוּעַ য়েশুয়া) হলেন খ্রিস্টধর্মের মূল ব্যক্তিত্ব। খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করেন যে, যিশুই হলেন পুরাতন নিয়মের ভবিষ্যদবাণীতে উল্লিখিত মসিহ এবং ঈশ্বরপুত্র। তাঁর ‘নতুন অনুশাসন’ ছিল পরস্পরের প্রতি প্রেম। খ্রিস্টান বিশ্বাস অনুসারে, নিজের মৃত্যু ও পুনরুত্থানের মাধ্যমে তিনি জগতের মুক্তি আনয়ন করেছিলেন।[৬][৭][৮][৯]
যিশুর জীবন ও শিক্ষা-সংক্রান্ত তথ্যের প্রধান উপাদান হল চারটি প্রামাণ্য সুসমাচার।[১০][১১][১২] কোনো কোনো গবেষক বিশ্বাস করেন যে, টমাস লিখিত সুসমাচার ও ইহুদিদের সুসমাচার নামক অপ্রামাণিক গ্রন্থগুলিও এই বিষয়ে প্রাসঙ্গিক।[১৩] অধিকাংশ সমালোচকই মনে করেন যে, নূতন নিয়মের অপরাপর অংশগুলিও যিশুর জীবনের ঘটনাগুলি পুনর্বিন্যাসে বিশেষ সহায়ক।[১৪][১৫][১৬][১৭] কারণ একথা প্রমাণিত্য সত্য যে, যিশু ছিলেন একজন ইহুদি; তিনি ছিলেন শিক্ষক ও চিকিৎসক; দীক্ষাদাতা জন তাঁকে দীক্ষা দিয়েছিলেন; এবং রোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের অভিযোগে জুডিয়ার রোমান প্রিফেক্ট পন্টিয়াস পিলাতের আদেশক্রমে জেরুজালেমে তাঁকে ক্রুসবিদ্ধ করা হয়েছিল।[১৮][১৯][২০][২১][২২][২৩][২৪][২৫][২৬][২৭][২৮]
বাইবেল সমালোচক ও ঐতিহাসিকেরা নানাভাবে যিশুকে বর্ণনা করেছেন। তাঁদের দৃষ্টিতে যিশু কখনও একজন স্ব-বর্ণিত মসিহ, কখনও একজন রহস্যোদ্ঘাটক (অ্যাপোক্যালিপটিক) আন্দোলনের নেতা, কখনও পরিব্রাজক সাধু, কখনও আশ্চর্য ক্ষমতাসম্পন্ন চিকিৎসক, কখনও বা এক স্বাধীন ধর্মীয় আন্দোলনের প্রবক্তা। অধিকাংশ সমসাময়িক ঐতিহাসিক যিশু বিশেষজ্ঞই তাঁকে একটি ইহুদি পুনর্জাগরণ আন্দোলনের এক স্বাধীন ও আশ্চর্য ক্ষমতাবান প্রতিষ্ঠাতা এবং আসন্ন রহস্যোদ্ঘাটনের প্রবক্তা মনে করেন।[২৯] যদিও অন্যান্য বিশিষ্ট গবেষকেরা মনে করেন যিশুর ‘স্বর্গরাজ্য’ ধারণাটি ছিল ভবিষ্যৎ রহস্যোদ্ঘাটনের পরিবর্তে এক আমূল ব্যক্তিগত ও সামাজিক পরিবর্তনের বার্তা।[২৯]
খ্রিস্টানদের প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, যিশুর জন্ম হয়েছিল কুমারীগর্ভে;[৮]:529-532 তিনি নানা অলৌকিক কীর্তি স্থাপন করেছিলেন;[৮]:358-359 তিনিই খ্রিস্টমণ্ডলী বা খ্রিস্টান চার্চ প্রতিষ্ঠা করেন এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থিত হয়ে স্বর্গারোহণ করেন।[৮]:616-620 খ্রিস্টানরা এও মনে করেন যে, স্বর্গ থেকে একদিন যিশু ফিরেও আসবেন।[৮]:1091-1109 অধিকাংশ খ্রিস্টান পণ্ডিত আজকাল যিশুকে এক প্রতিক্ষিত মসিহ ও ঈশ্বর রূপে বর্ণনা করে থাকেন।[৩০] তাঁদের মতে, যিশু পুরাতন নিয়মের অনেক ভবিষ্যদবাণীকে পূর্ণ করেছেন।[৩১] অধিকাংশ খ্রিস্টানই যিশুকে দিব্য ত্রিমূর্তির পুত্ররূপী ঈশ্বরাবতার মনে করে পূজা করেন। অল্প কয়েকটি খ্রিস্টান সম্প্রদায় অবশ্য ত্রিমূর্তিবাদকে অশাস্ত্রীয় আখ্যা দিয়ে তাকে আংশিক বা সম্পূর্ণত প্রত্যাখ্যান করে থাকে।[৩২][৩৩][৩৪]
ইহুদি ধর্ম যিশুর প্রতীক্ষিত মসিহ হওয়ার তত্ত্বটিকে প্রত্যাখ্যান করে থাকে। উক্ত ধর্মের মতে, যিশু তানাখে উল্লিখিত নবিদের ভবিষ্যৎবাণীগুলিকে পূর্ণ করেন না।[৩৫] ইসলাম ধর্ম যিশুকে (আরবি: عيسى, ঈশা) আল্লাহ্-প্রেরিত এক গুরুত্বপূর্ণ রাসুল,[৩৬][৩৭] ইঞ্জিল-আনয়নকারী (শাস্ত্র-আনয়নকারী) এবং কুমারীগর্ভজাত মনে করে। কিন্তু তাঁর ক্রুসবিদ্ধকরণের ঘটনা ইসলামে স্বীকৃত নয়।[৩৮] ইসলাম ও বাহাই ধর্মে যিশুকে মসিহ মনে করা হয় বটে,[৩৯][৪০] কিন্তু তাঁকে ঈশ্বরাবতার মনে করা হয় না।
তাঁর জীবন ও শিক্ষাকে (নতুন বাইবেলে উল্লেখিত) ভিত্তি করে এই ধর্ম গড়ে তোলা হয়েছে। তাঁকে যিশু খ্রিস্ট বলে উল্লেখ করা হয়। খ্রিস্ট অর্থাৎ “অভিষিক্তজন” একটি গ্রিক-আগত উপাধি (Χριστός খ্রিস্তোস্), অনেকটা হিব্রু-আগত মসিহের অনুরূপ